🔥 মাইলস্টোন স্কুলে বিধ্বস্ত যুদ্ধবিমান, নিহত ৩১, আহত ১৬৫
মাত্র সাত সেকেন্ড। এর মধ্যেই একটি স্কুল ভবন ধ্বংসস্তূপে পরিণত হলো।
ছিন্নভিন্ন হলো শিক্ষার্থী, শিক্ষক ও অভিভাবকের জীবনের স্বপ্ন ও সম্ভাবনা।
২১ জুলাই সোমবার, দুপুর আনুমানিক ১টা ১৮ মিনিটে উত্তরার মাইলস্টোন স্কুল অ্যান্ড কলেজের হায়দার আলী ভবনে একটি যুদ্ধবিমান বিধ্বস্ত হয়। এই মর্মান্তিক ঘটনায় এখন পর্যন্ত ৩১ জন নিহত এবং ১৬৫ জন আহত হওয়ার খবর পাওয়া গেছে। নিহতদের অধিকাংশই শিশু, যাদের বয়স ১২ বছরের নিচে।
সরকার ইতোমধ্যে একদিনের রাষ্ট্রীয় শোক ঘোষণা করেছে।
🎙️ শিক্ষকের চোখে সেই বিভীষিকাময় মুহূর্ত
ঘটনার প্রত্যক্ষদর্শী ও স্কুল শাখার সিনিয়র শিক্ষক ওয়ালিউল্লাহ বলেন,
“ক্লাস শেষে আমি ক্যান্টিনে যাওয়ার উদ্দেশ্যে বের হই। তখন সময় আনুমানিক দুপুর একটা ১৮ মিনিট। বিমানের শব্দ শুনে আকাশের দিকে তাকাই, মনে হচ্ছিল বিমানটি দূরে কোথাও চলে যাবে। কিন্তু দুই সেকেন্ডের মধ্যেই এটি স্কুলের দিকে আসে এবং স্কুলের ভবনে আছড়ে পড়ে।”
এর ঠিক পাঁচ থেকে সাত সেকেন্ডের মধ্যে বিকট শব্দে বিস্ফোরণ ঘটে। আগুন ছড়িয়ে পড়ে চারদিকে।
তিনি জানান,
“শব্দ শুনে আমি কী করবো বুঝতে পারছিলাম না। একজন ছাত্র বলছিল, ‘স্যার আমাকে বাঁচান… আমাকে পানি খাওয়ান।’ সবদিকে আগুন। আগুনের মধ্যে থেকে আমাদের এক মিস বললেন, ‘আমাকে বাঁচান, পানির ব্যবস্থা করেন।’”
🕊️ দগ্ধ অবস্থায় শিক্ষার্থীদের উদ্ধার করে প্রাণ দিলেন শিক্ষিকা
এই ভয়াবহ পরিস্থিতিতে যিনি সত্যিকারের নায়িকা হয়ে ওঠেন, তিনি হলেন মাহেরীন ম্যাডাম।
ওই ভবনের কো-অর্ডিনেটর ছিলেন তিনি। ওয়ালিউল্লাহ জানান,
“মাহেরীন ম্যাডাম ছাত্রদের বাঁচানোর চেষ্টা করছিলেন। উনি ১০ থেকে ১৫ জনকে বের করতে পেরেছিলেন। তারপর একটা সময়ে সেন্সলেস হয়ে যান। পরে উনি মারা গেছেন। বাকিদের আর বের করা যায়নি। যারা ছিল তারা সম্ভবত মারা গেছে অথবা পরে উদ্ধারকারী বাহিনী বের করছে।”
🧒 আর ১০ মিনিট আগে হলে…
তিনি বলেন,
“আল্লাহ রহম করেছেন। আর মাত্র ১০ মিনিট আগে বিমানটি বিধ্বস্ত হলে আমাদের আর রক্ষা ছিল না। কারণ তখন স্কুলে ক্লাস হচ্ছিল। এই ভবনে প্রায় ২৫০ থেকে ৩০০ শিক্ষার্থী ক্লাস করছিল। মাঠেও অনেক ছাত্র-ছাত্রী খেলছিল।”
📌 দ্বিতীয়তলায় পানি খেতে গিয়ে প্রাণ হারাল ছাত্র
এক ছাত্র দ্বিতীয়তলা থেকে পানি খাওয়ার জন্য নিচে নেমে এসেছিল। ঠিক তখনই বিকট শব্দ হয়। শিক্ষকের ভাষায়,
“সে বিমানের শব্দ শুনে পড়ে যায় ওখানেই।”

🏫 ভবনটিতে চলছিল পরামর্শ ক্লাস
ওয়ালিউল্লাহ জানান,
“সাম্প্রতিক সময়ে আমাদের পরীক্ষা হয়েছিল। এ পরীক্ষায় যাদের ফলাফল খারাপ হয়েছে তাদের শিক্ষকরা পরামর্শ ও সাজেশন দিচ্ছিলেন হায়দার আলী ভবনে। কিছু দুর্বল ছাত্র ছিল, তাদের কিছুক্ষণ পরে ক্লাস শুরু করার কথা ছিল। তাদের খাওয়ানোর জন্য কয়েকজন অভিভাবক এসেছিলেন। তারা ভবনটির সামনে ছিলেন সন্তানদের সঙ্গে।”
🕯️ স্বপ্নগুলো যে পুড়ে ছাই হলো
শিক্ষার্থীদের স্বপ্ন ছিল ভালো রেজাল্ট করার, আরও ভালো মানুষ হওয়ার, একজন সফল কেউ হয়ে ওঠার।
কিন্তু মাত্র সাত সেকেন্ডেই সেই সব স্বপ্ন, সম্ভাবনা, ভবিষ্যৎ পুড়ে ছাই হয়ে গেছে।
ওয়ালিউল্লাহ শেষ কথায় বলছিলেন,
“শুধু একটা ক্লাস, একটা ভবন না—পুড়েছে দেশের আগামী দিনের সম্ভাবনা।”
🏥 চিকিৎসা ও তদন্ত
আহতদের মধ্যে ৫০ জনের বেশি দগ্ধ অবস্থায় বর্তমানে জাতীয় বার্ন ও প্লাস্টিক সার্জারি ইনস্টিটিউটে চিকিৎসাধীন রয়েছেন।
অন্তঃবাহিনী জনসংযোগ পরিদপ্তর (আইএসপিআর) জানায়,
বিমান বিধ্বস্তের কারণ অনুসন্ধানে একটি উচ্চপর্যায়ের তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে।
🧭 সামাজিক প্রশ্ন ও রাষ্ট্রীয় দায়িত্ব
এই ঘটনা শুধু একটি দুর্ঘটনা নয়। এটি তুলে ধরছে আমাদের সামরিক-প্রশিক্ষণের নিরাপত্তা, জনবহুল এলাকায় ঝুঁকিপূর্ণ উড়ালনীতির কার্যকারিতা এবং একটি রাষ্ট্রের ভবিষ্যৎ নাগরিকদের নিরাপত্তার প্রতি দায়বদ্ধতার প্রশ্ন।
জাতীয় শোক যথাযথ,
কিন্তু শোকের সাথে চাই জবাবদিহিতা।
কারণ একটি জাতির জন্য সবচেয়ে ভয়ঙ্কর বাস্তবতা হলো—
❝ যখন শিশুদের স্বপ্ন পোড়ে, আর কেউ দায় নেয় না। ❞