“Democracy is a device that ensures we shall be governed no better than we deserve.”
— George Bernard Shaw
একটি বহুল আলোচিত মতবাদ, যা আজকের রাজনৈতিক বাস্তবতায় নতুনভাবে গুরুত্ব পাচ্ছে:
“গণতন্ত্র হচ্ছে মূর্খের শাসন ব্যবস্থা”
এই কথাটি যতটা প্ররোচনামূলক, তার অন্তর্নিহিত তাৎপর্য ততটাই গভীর। এটি কোনো একরৈখিক ব্যঙ্গ নয়, বরং একটি জাতির বুদ্ধিবৃত্তিক ও সামাজিক চেতনাকে প্রশ্নবিদ্ধ করার সাহসী প্রচেষ্টা।
📌 গণতন্ত্রের মূল চেতনা
গণতন্ত্র একটি রাজনৈতিক ব্যবস্থা, যেখানে জনসাধারণের মতামত ও ভোটের মাধ্যমে শাসক নির্ধারণ হয়। এই পদ্ধতিতে প্রত্যেক নাগরিকের ভোট সমান মূল্য রাখে—শিক্ষিত বা অশিক্ষিত, চিন্তাশীল বা অন্ধভাবে অনুসরণকারী—সবাই একই ক্ষমতা পায়।
এবং এখানেই মূল সংকটের বীজ রোপিত হয়।
📉 যখন সংখ্যাই নির্ধারণ করে গুণমান
একজন চিকিৎসক, একজন প্রকৌশলী বা একজন বৈজ্ঞানিক হতে হলে তাকে পরীক্ষায় পাস করতে হয়। কিন্তু একটি দেশের শাসক হওয়ার জন্য কোনো জ্ঞান, নৈতিকতা, বা মানসিক পরিপক্বতার প্রমাণের প্রয়োজন নেই—শুধু ভোট পেলেই চলবে।
এখানে প্রশ্ন উঠবেই:
যদি ভোটারদের অধিকাংশই হয় অশিক্ষিত, অসচেতন, কিংবা ধর্ম/জাত/লাভ/লালসা দ্বারা প্রভাবিত—তবে তাদের দ্বারা নির্বাচিত শাসক কি সত্যিই জনকল্যাণে নিবেদিত হবে?
📚 ইতিহাস কি বলে?
গণতন্ত্রের ব্যর্থতার উদাহরণ আমাদের আশেপাশেই ছড়িয়ে আছে।
- জার্মানিতে হিটলার এসেছিল জনগণের ভোটেই।
- বাংলাদেশেও বহুবার দেখা গেছে, জনতার আবেগ ও উগ্রতা ব্যবহার করে একদল নেতা ক্ষমতায় এসেছে, কিন্তু ক্ষমতায় এসে তারাই গণতন্ত্রকে পদদলিত করেছে।
❝ মূর্খ মানে কেবল অশিক্ষিত নয় ❞
এখানে “মূর্খ” বলতে কেবল অক্ষরজ্ঞানহীন মানুষকে বোঝানো হয় না।
মূর্খতা হলো:
- যুক্তিহীন আবেগে চলা,
- দলগত অন্ধতা,
- নেতার ব্যক্তিপূজায় লিপ্ত থাকা,
- বা সত্য-মিথ্যা যাচাই না করেই অনুসরণ করা।
অন্যভাবে বললে, একটি সমাজ যতদিন না সচেতন, তথ্যনির্ভর, নৈতিকভাবে দৃঢ়—ততদিন গণতন্ত্র তাদের জন্য শাসনব্যবস্থা নয়, বরং আত্মবিনাশের রাস্তাই।
💬 কিছু তীব্র উক্তি
- সক্রেটিস বলেছিলেন:
“When you give power to people who are not wise, they will misuse it, even if unintentionally.” - ইবনে খালদুন তার ‘মুকাদ্দিমা’-তে বলেছেন:
“When a nation begins to love entertainment more than education, that is the beginning of its fall.” - জন স্টুয়ার্ট মিল বলেছিলেন:
“The worth of a state, in the long run, is the worth of the individuals composing it.”
🧠 সমাধান কী?
- শিক্ষার প্রসার:
একটি সচেতন জাতিই পারে সঠিক নেতা নির্বাচন করতে। - নৈতিক শিক্ষার চর্চা:
শুধু তথ্য নয়, মূল্যবোধও জানতে হবে—কি ভালো, কি মন্দ। - মিডিয়ার দায়িত্ব:
সংবাদমাধ্যমকে সত্য ও বিশ্লেষণভিত্তিক তথ্য তুলে ধরতে হবে। প্রপাগান্ডা ছড়ানো নয়। - সাংবাদিকতার সাহস:
প্রশ্ন তুলতে হবে, অপশাসনের মুখোশ খুলে দিতে হবে।
📣 পাঠকের প্রতি আহ্বান
আপনার ভোট একটি অস্ত্র—তা যদি অজ্ঞতার হাতে যায়, তবে তা জাতিকে ধ্বংস করবে। আপনি যদি একজন সচেতন নাগরিক হতে চান, তবে প্রথমেই নিজেকে জানুন, শিখুন, বিশ্লেষণ করুন। মনে রাখবেন:
“একটি অজ্ঞ ভোটার একটি দুর্নীতিপরায়ণ নেতার চেয়েও বেশি বিপজ্জনক।”
✒️ উপসংহার
গণতন্ত্র কোনো যাদুর কাঠি নয়। এটি একটি প্রতিচ্ছবি—যেমন জনগণ, তেমন শাসক। যদি সমাজে মূর্খতা ও অন্ধ অনুসরণকারীতার রাজত্ব হয়, তবে গণতন্ত্রও মূর্খদের শাসন ব্যবস্থায় রূপ নেবে।
তাই পরিবর্তন আনুন নিজের মধ্যেই। জাগ্রত করুন চেতনা, কারণ গণতন্ত্র তখনই সার্থক, যখন তা জ্ঞানী ও বিবেকবান নাগরিকদের হাতেই থাকে।
agree